happy diverse friends laughing with smartphone at home

ফ্যাশন ফিল্ম নিয়ে একটি পোস্ট করার পর অনেকে ফ্যাশন ফিল্ম বানানোর বিষয়ে আগ্রহী হয়েছেন। যা সত্যিই একটা ভালো দিক। এর জন্য আপনাকে অস্কারি জয়ী পরিচালক হবার প্রয়োজন নেই। তবে একদম সাধারণ কিছু কাজ আপনাকে জানতে হবে, তাহলে আপনার হাতের মোবাইল দিয়েই নিজেই বানাতে পারবেন আপনার ফ্যাশন ফিল্ম।

যাই হোক, আমরা এর আগের পোস্টে জেনেছি যে ফ্যাশন ফিল্ম কি আর এর প্রয়োজনটাই বা কেনো হয়। অনলাইনে পোশাকের ব্যবসা থাকলেই আপনাকে ফটো তুলতেই হবে , নইলে কাস্টমারের কাছে পোশাকগুলো উপস্থাপন করতে পারবেন না। তাহলে তো ফটো তুললেই হয় আবার ভিডিও কেনো? ভিডিও মানেই হলো মুভমেন্ট থাকবেই, আর এই মুভমেন্ট-এর জন্য প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে আপনার কালেকশন। মনে হবে যেন চোখে সামনে দেখতে পাচ্ছেন পোশাকটা পরে দাঁড়ালে, হাঁটলে, বসলে কেমন লাগে, কেমন করে শাড়ির আঁচলটা ওড়ে, কেমন লাগে জামার পেছন দিকের নকশাটা বা হাতের কাজটা। এটা আপনার কষ্টের পোশাকগুলিকে আরো আকর্ষণীয় এবং সৃজনশীল করে কাস্টমারের সামনে উপস্থাপন করে। যা ফটো থেকে আপনি পাবেন না।

ভিডিও দেখে পোশাক কিনলে তা ফেরৎ আসে কম বা দেখলাম অন্যরকম আর পেলাম অন্য রকম, অমুক একটা প্রতারক বা এটা সেটা খারাপ কিছু শুনতে হয়না বুটিক হাউসকে। আর বিক্রয় বাড়েও বেশি। মনে আছে একসময় পাখি জামা বা কোলকাতার সিরিয়ালের নামে অমুক শাড়ি তমুক শাড়ি এসব প্রতি ঈদে বিভিন্ন নামে বাজারে আসতো। এর কারণ হলো সিরিয়ালে সেই পোশাকগুলো পরে হাঁটাচলা, ওঠা বসা সবরকম ভাবেই কাস্টমার দেখতে পেতেন পোশাকগুলো। ফলে তারা কল্পনায় সেই পোশাকগুলো পরে ফেলে এবং নিজেদের কেমন লাগে তা দেখতে পায়। তাই চাহিদাটাও বেড়ে যায়।

আমরা আজকে ফ্যাশন ভিডিও নিজেই বানাতে কি কি লাগবে তা নিয়ে আলোচনা করবো।

ফ্যাশন ভিডিও বানাতে আপনার লাগবে

· ফ্যাশন কালেকশন

· বিষয় বস্তু নির্ধারণ

· মডেল

· লোকেশন

· ক্যামেরা বা ভালো ক্যামেরা আছে এমন মোবাইল ফোন

· লাইট

পোশাক নির্বাচন

পোশাক নির্বাচন করতে সবগুলো নতুন ডিজাইন একবারে দেখিয়ে দেবেন না। ৩/৪ পোশাক কালেকশন নিয়ে ভিডিও শুরু করুন। এর মধ্যে জনার-এর দিকে খেয়াল রাখুন। শাড়ির সাথে জিন্স ঢোকাবেন না। ইথনিক পোশাকে অন্য কোনো ইথনিক ড্রেস রাখুন। সেভাবে অন্য উপকরণগুলোও নির্বাচন করুন।

বিষয়বস্তু নির্ধারণ (Creative concept)

কি কি জিনিস দেখাতে চান বা ভিডিওটার বিষয়বস্তু কি হবে এটা নির্ধারণ করা হলো সর্ব প্রথম কাজ। আপনি কি সাধারণ শো-কেসিং করবেন? থিমেটিক, মানে সাধারণভাবে কালেকশনগুলো উপস্থাপন করা একের পর এক- এটাই শো-কেসিং। আবার আপনার লাইফস্টাইলকেও হাইলাইট করতে পারেন। অর্থাৎ আপনার জীবনের আনন্দময় মুহূর্তগুলোর টুকরো টুকরো অংশ ভিডিও করবেন। এক একটা ভিডিও একটা পোশাক পরে করবেন। যেমন দুই বান্ধবী দুই ধরনের পোশাক পরে দুষ্টুমি খুনসুটি করলেন। অন্য পোশাক পরে একটা ঝর্ণা নিয়ে ফুল গাছে পানি দিচ্ছেন, বা কফি হাতে ইজি চেয়ারে বসে মায়ের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। যাই করেন, মনে রাখবেন পোশাকের ধরনগুলো একই রকম হওয়া চাই। কখনো সালোয়ার বা কুর্তি পরলেন আবার কখনও মিনি স্কার্ট পরলেন ব্যাপারটা এমন হওয়া চলবে না। অর্থাৎ পোশাকের ধরনটাও একই রকম হতে হবে। আমরা পোশাক পরি ক্যামেরার সামনে হা করে দাঁড়িয়ে টেড়াব্যাঁকা হয়ে ফটো তোলার জন্য না, নিজেকে পরিপাটি করে উপস্থাপনের জন্য। ভিডিওতে সেভাবেই নিজেকে উপস্থাপন করবেন। স্বাভাবিক জীবনের ছবি তুলে ধরার চেষ্টা করবেন। এছাড়া রোমান্স, স্বপ্ন, আনন্দ, আবেদন সব কিছুর উপরই বিষয় বস্তু নির্ধারণ করা হয়।

স্টোরিবোর্ড তৈরি:
স্টোরিবোর্ড হলো ছবিসহ শট-এর নাম ও বর্ণনা। এখানে সমস্ত এক্সপ্রেশন, এংগেল, শট, মুভমেন্টসহ দৃশ্যের বর্ণনা থাকে যাতে ভিডিও শ্যুটিং-এর সময় সমস্ত ভিডিও শ্যুট করা হয়ে যায়। এতে করে আপনার কাজ সহজ হয়ে যায়। আপনি প্রয়োজনীয় শটগুলো স্টোরি বোর্ড অনুযায়ী করে নিলে এডিট-এ গিয়ে ফুটেজ শর্টেজ হবে না। কারণ স্টোরিবোর্ডে উল্লেখের পরও এক্সট্রা শট নিয়ে রাখা হয়ই। যা একটা সুন্দর ও পরির্পর্ণ ভিডি নির্মাণে সহায়তা করে।

ফ্যাশন ভিডিওর প্রস্তুতি ও পরিবেশ তৈরি

একটা সেট বা যেখানে দাঁড়য়ে ভিডিও করবেন সেই জায়গাটা পরিপাটি করা, গুছানো এসব করতে হবে। আপনি আপনার পছন্দমতো নিজেই সাজিয়ে একটা পরিবশে তৈরি করতে পারেন। একটা এক রঙা দেওয়াল, বা ঘরের কোনো একটা সাজানো কর্নার, চওড়া বেলকোনী, লনের সবুজ ঘাস বাগানের গাছপালার মাঝেও করতে পারেন আপনার ভিডিও শ্যুট। আবার চেয়ার, ছাতা, লাঠি, কুকুর, বেড়াল, সাইকেল ইত্যাদিও রাখতে পারেন সেই পরিবেশে। এই আনুষঙ্গিক জিনিসগুলোকে প্রপস বলে। অর্থাৎ খুব সাধারণভাবে কৌশলে অর্প কিছু নিয়েই পরিবেশটা সাজিয়ে নিন। এটা আপানার রুচির পরিচয় দেবে আর ভিডিওতে যত কম জিনিস থাকবে ততই আপনার পোশাকগুলো নজরে আসবে। বেশি জিনিষপত্র থাকলে তা পোশাক থেকে দর্শকের দৃষ্টি অন্যদিকে নিয়ে যাবে।

আপনার বিষয় বস্তুতে সেটের ব্যাকগ্রাউন্ডও একটা বড় ব্যাপার। গরমের মৌসুমের পোশাক ভিডিও শ্যুট করলে ব্যাকগ্রাউন্ডও ব্রাইট চয়েস করুন। যেমন গরমের রৌদ্রজ্জ্বল দিনের প্রকাশ হিসাবে হলুদ বা কমলা ব্যাকগ্রাউন্ড হতে পারে, বা পোশাকের রঙের সাথে কন্ট্রাস্ট করে পছন্দমতো রঙও হতে পারে আবার প্রাকৃতিক পরিবেশও ব্যাকগ্রাউন্ড হিসাবে রাখতে পারেন। মিউজিক বা গান দিয়ে ভিডিও বানাতে চাইলে সেক্ষেত্রে একটু জোরে ভলিওম দিয়ে গানটা শুনতে পারেন এতে চলাফেরায় বা অঙ্গভঙ্গিতে ছন্দ আসবে এক ধরনের।

লাইটিং

পোশাক পরিহিত মডেলের উপর প্রয়োজনীয় লাইট থাকা জরুরী, নইলে প্রকৃত রঙ আসবে না। ভিডিওর একদিকে কালো অন্য দিকে উজ্জ্বল দেখা যাবে। তাই ঘরের ভিতর হলে প্রয়োজনে সব লআইট জ্বালিয়ে দেবেন বা অতিরিক্ত লাইট জ্বালাবেন। বর্তমানে এলইডি লাইটগুলো অনেক সুবিধাজনক এই কাজের জন্য। যদি সরাসরি লাইটে পেছনে স্পষ্ট ছায়া পড়ে, তাহলে সামনে ট্রেসিং পেপার বা সাদা কাগজ বা প্লাস্টিক দিয়ে সরাসরি লাইট আড়াল করুন- স্পষ্ট ছয়া বোঝা যাবে না। গাঢ় ছাযার যে লাইটিং-এর কারণে হয় তাকে হার্ড লাইটিং বলে, আর আড়াল করা লাইটিংকে সফট লাইটিং বলে। আপনি পরিবেশ বুঝে লাইটিং সেট করবেন। এরপর ক্যামেরা চালু করে লাইটিং-এর তীব্রতা বা নমনীয়তা চেক করবেন।

স্টাইলিং

পোশাকের সাথে মানানসই জুয়েলারি, তবে হালকা জুয়েলারি বেছে নেওয়া উচিৎ। কারণ পোশাকের চেয়ে যেন জুয়েলারিতেই দৃষ্টি না পড়ে যায় সেদিক খেয়াল রেখে জুয়েলারি নির্বাচন করতে হবে। এর সাথে জুতো নির্বাচন করাও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনার উচ্চতা একটু কম হলে বেশি উচ্চতার জুতা আপনাকে আরো একটু সৌন্দর্য্য দেবে আর পোশাকটাও ভালো মানাবে আপনাকে। এছাড়া উঁচু জুতা সেটে আপনার নড়াচড়া বা অঙ্গভঙ্গি আরো সহজ করে দেবে। ফলে মনেই হবেনা যে আপনাকে কষ্ট করে পোজগুলো আয়ত্ত করতে হয়েছে। আর আপনাকে একটা স্লিম লুকও দেবে। আহামরি ভারী মেকাপ করবেন না। আপনার সাথে মানান সই হালকা মেকাপ করুন। মুখ সাদা হাত কালো এমন যেন না হয়। বাই কালার কমপ্লেকশন, অর্থাৎ একই অঙ্গে তুলনামূলক উজ্জ্বল আর রোদে জ্বলা ত্বক, হলে মেকআপ করুন। আপনি ভিডিও তে মডেল নয় পোশাককেই উপস্থাপন করুন বেশি।

মডেল

মডেল হিসাবে প্রাথমিকভাবে নিজেদের কাউকে বেছে নিন। মডেল হওয়ার জন্য স্লিম আর আবেদনময়ী হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। চলাফেরায় ছন্দ আছে আর পোশাকটি মানায় এমন কাউকেই মডেল হিসাবে নির্বাচন করতে পারেন।কোজটা ভালো ভাবে শিখলে প্রফেশনাল ভাবে করতে হলে সেক্ষেত্রে মডেল হায়র করতে পারেন। এওকাধিক মডেলও ব্যাবহার করতে পারেন আপনার কন্সেপশান বা বিষয়বস্তুর উপর নির্ভর করে। আবার স্বাস্থ্য ভালো এমন কাউকেও মডেল করা যেতে পারে। আমাদের দেশে এভারেজ মেয়েদের বডি সাইজ ৩৬-৩২-৪০। কাজেই আপনার গ্রাহকরাও মোটামুটি এই মাপেরই শরীরের অধিকারিনী হবেন। তাই এমন কাউকে পেলেও মডেল হিসাবে নিয়ে নেবেন সাথে সাথেই। কারণ, মানুষ নিজের মতো অন্য একজনকেই মডেল হিসাবে দেখতে চান সবার আগে, অর্থাৎ পোশাকটা তাকে কতটা মানাবে সেটা বুঝতে পারেন তিনি একই রকম শারীরিক গঠনের কাউকে দেখলে।

ভিডিও রেকর্ড

সব তো হলো। এবার ভিডিও রেকর্ড করার পালা। ভিডিও রেকর্ড করতে যাবার আগে আমরা ক্যামেরার ফ্রেম অর্থাৎ ক্যামেরায় আমরা সামনের দৃশ্য কতটুকু পরিমাণ ভিডিও করবো তা নির্ধারণ করবো। আমরা সামনের দৃশ্যের অনেকটা জায়গা ক্যামেরায় রেকর্ড করতে পারি, আবার ছোট একটা অংশও করতে পারি। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়- একটা মাঠে দাঁড়িয়ে আছেন। আপনাকেসহ পুরো মাঠের যতটা সম্ভব অংশ ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে। এই শটকে বলে লং শট। আপনার পা মাথা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে যে শটে সেটা ফুল শট। আবার আপনার মাথা থেকে হাঁটু পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে এটা মিডল শট আর শুধু মুখ মন্ডলটাই দেখা যাচ্ছে-এটা ক্লোজ শট।


শট সমূহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিচে দেওয়া হলো।

এক্সট্রিম লং শট: এ শটকে এক্সট্রিম ওয়াইড শটও বলে। এই শট ক্যামেরায় অনেক বড় এলাকা কভার করে। আপনার মডেলের বা সাবজেক্টের পুরো শরীর ধারণ করার সাথে সাথে তার চারপাশটাও ধারণ করে। এই শট আপনার দৃশ্যের বিস্তারিত বিবরণ ধারণ করে।

লং শট বা ফুল শট: মা থেকে পা পর্যন্ত আপনার সাবজেক্ট-রে পুরো শরীর কে ধারণ করে। আপনার সাবজেক্ট যে পরিবেশে আছে সেটাও ধারণ করে। এই শটে সাবজেক্ট আমাদের মূল লক্ষ্য হলেও এর আশেপাশের পরিবেশও ধারণ করা হয় ক্যামেরায়।

মিডিয়াম লং শট: এই শটকে থ্রি কোয়ার্টার শটও বলা হয়। আপনার সাবজেক্টের মাথা থেকে হাঁটু পর্যন্ত ধারণ করে। এটা লং শট আর মিডিয়াম শটের মাঝামাঝি একটা শট। মিডিয়াম লং শটে আপনার সাবজেক্টের কাছাকাছি পরিবেশ ও মানুষ বা যা থাকে সেসব ধারণ করে। আপনার সাবজেক্ট-এর আশে পাশে ২/৩ জন মানুষ থাকলে এই শট খুবই কার্যকরী।

মিডিয়াম শট: এই শটকে কোমর শটও বলে। মিডিয়াম শট সাবজেক্টকে কোমর পর্যন্ত ক্যামেরা বন্দী করে। সাধারণত ইন্টারভিউ বা মডেলের পোশাকের উপরের অংশকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য এই শট

মিডিয়াম ক্লোজআপ: মিডিয়াম ক্লোজআপে সাবজেক্টের মাথা থেকে বুক পর্যন্ত ভিডিও ধারণ করা হয়। পুরো স্ক্রিনেই সাবজেক্ট থাকে। আশেপাশে কি আছে তা কমই বোঝা যায়। সাবজেক্ট-এর মুখের এক্সপ্রেশন স্পষ্ট বোঝা যায়। সাধারণ ইন্টারভিউ বা ফ্যাশন ফিল্মে মডেলের হাসি, বা মেকআপ ও জুয়েলারি ইত্যাদি দেখানোর জন্য এই শট ব্যবহার হয়।

ক্লোজআপ শট: মাথা থুতনি পর্যন্ত বা গলার গোড়া পর্যন্ত শটকে ক্লোজ আপ শট বলে। এতে পুরো মাথা ও মুখমন্ডল স্ক্রিন জুড়ে থাকে। এতে আবেগ ও মুখের বিভিন্ন এক্সপ্রেশন বোঝা যায়। ফ্যাশন ফিল্মে মেকআপ, বা শরীরে পোশাকের বিশেষ কিছু কাজকে গুরুত্ব দিয়ে দেখানো সম্ভব। যেমন পিঠের কোনো নক্শা, হাতের বাহুতে কাজ বা জুয়েলারির নকশা ইত্যাদি ডিটেলে দেখানোর জন্য এই শট ব্যবহার করা হয়।

এক্সট্রিম ক্লোজআপ: সাধারণত কোনো ব্যক্তির মৌখিক অভিব্যক্তি বা এক্সপ্রেশনস-এর জন্য এশটটি ব্যবহার হলেও আমরা ফ্যাশন ফিল্মে ছোট ছোট বিষয়গুলেঅ বিস্তারিত করে দেখাবো। যেমন ঠোঁটে লিপস্টিকের প্রলেপ, কানের ঝুমকা, নাকফুল, জামায় কোনো অর্নামেন্ট বা জুয়েলারি বা হাতের সূক্ষ্ম কাজ ইত্যাদির জন্য আমরা এক্সট্রিম ক্লোজআপ ভিডিও শট ব্যবহার করবো।

মনে রাখবেন ফটো তোলার জন্যও একই রকম শট ব্যবহার করা হয় এবং শটগুলোর নামও একই রকম হয়।

আমরা কোন ধরনের শট কখন ব্যবহার করবো: ফ্যাশন ফিল্মে আমরা ফুলশট, থ্রি কোয়ার্টার শট ও এবং মিডিয়াম শট নিয়েই কাজ করবো। একই জায়গায় একই দৃশ্যের ধারণ করবো ৩টা শট দিয়েই। আলাদাভাবে শটগুলো দিয়ে ভিডিও করবো। অনেকে জুম ইন করে করে ভিডিও করে। এটা একটা ভুল বা বদ অভ্যাস। আমরা একই জায়গায় একই দৃশ্যের তিন ধরনের ৪টা শট নেবো । তিন ধরনের চারটা কেনো? কারণ, একটা এক্সট্রা শট নেবো কোমরের নিচে অংশের পোশাক দেখানোর জন্য। শাড়ি বা পাজামা প্লাজোর জন্য মিডিয়াম শট আলাদা একটা নেবো। ফলে আমরা পুরো শরীরে পোশাক সেট কেমন লাগবে টো দেখাতে পারবো, জামা বা পায়জামা কেমন লাগবে সেটাও দেখাতে পারবো।

মডেল মুভমেন্ট : ভিডিওতে আমরা পোশাক পরা মডেলের সার্বক্ষণিক হাঁটা-চলা, নড়াচড়া বা ছন্দময় নাচ দেখবো। অর্থাৎ কোনো না কোনোভাবে একটা মুভমেন্ট থাকবে। তবেই হবে ম্যুভিং ইমেজ। এটা অনেক প্রফেশনাল মডেলের জন্যও নতুন বিষয়। কারণ তারা এতোদিন স্থিরচিত্র বা ফটোর জন্য পোঁজ দিয়েছে আর এখন চলমান ছবি বা ভিডিওতে মডেল হয়ে প্রদর্শন করতে হচ্ছে। তাই শ্যুটিং করা আগে আয়নায় আপনার হাটা চলা, হালকা নাচ, একটু দৌড় বাযা বিষয় বস্তুর সাথে যায় তা প্রকটিস করুন। তাহলে শরীরের ভঙ্গিমা, পোশাকের সর্বোচ্চ ভালো লাগা এংগেল এসব আয়ত্তে চলে আসবে। মনে রাখবেন, পোশাককে আকর্ষণীয় ভাবে উপস্থাপনের জন্য কখনো সরাসরি ক্যামেরার দিকে মুখ করে দাঁড়াবেন না। ডান বা বাম এংগেলে দাঁড়ান, যে এংগেল আপনার জন্য ভালো দেখাবে সে এংগেল হয়ে দাঁড়ান । এতে পোশাক আপনাকে জড়িয়ে রেখেছে কতটা নিবিড়ভাবে, পোশাকের প্যাটার্ন ও ডিজাইন. আপনার বডিলাইন সব পরিস্কারভাবে ফুটে উঠবে।

মডেলের অবস্থান চিহ্নিত করুন: সেটের মেঝেতে চক বা কোনো কিছু দিয়ে দাগ এঁকে দিন যেন আপনার মডেল সেই দাগের উপর দাঁড়াতে, ঘুরতে এগোতে পারে। ক্যামেরার ফ্রেমে দেখুন কতটুকু জায়গা স্ক্রিনে দেখা যায়। সেই হিসাবে ফ্রেমের শুরু এবং শেষ জায়গা যতটুকু এলাকা নিয়ে দেখা যায় সেখানে চিহ্ন দিন। যাতে ফাইনাল শটগুলো এর মধ্যেই থাকে।

মডেলকে ফ্রেমের মধ্যে এবং তার উপর ফোকাস থাকতে হবে: প্রতিটা শট নেবার পর চেক করে নিন যেন মডেলের নড়াচড়া বা অবস্থান ফ্রেমের মধ্যেই থাকে এবং তিনি ফোকাসে আছেন। কোনো ভিডিওতে মডেল যেন ফোকাসের বাইরে না থাকে। তাহলে তার ছবিটি ঝাপসা দেখা যাবে। খেয়াল রাখবেন যেন তার হাত, মাথা, পা, চুল এর মতো শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ যেন ফ্রেমের বাইরে না থাকে। তাহলে বিডিওটি চালানোর সময় এই অংশগুলো কাটা পড়বে। এমন হলে মডেলের অবস্থান এ্যডজাস্ট করে আবার শ্যুট করুন।

বিভিন্ন শট নিয়ে চর্চা করুন: ভিডিওর নিয়ম অনুযায়ী কমপক্ষে তিন ধরনের শট নিয়ে রাখুন যা আ্ই আমরা বর্ণনা করেছি। এছাড়াও মডেল কে মুভমেন্ট-এর মধ্যে একবার পেছন ফিরতে বলুন যেন পোশাকের পেছন দিকের লুকও দেখানো যায়। আবারো বলছি, কোনো রকম জুম বা ক্যামেরা ভিউ নড়াচড়া করবেন না। একেবারে একটা শট শট ফিক্সড করে শট নেবেন। এরপর জুম ইন করে দ্বিতীয় শট নেবেন। প্রয়োজন বোধে বিভিন্ন শট বিভিন্ন এংগেল থেকে নেবেন। যত বেশি শট নেবেন এডিটিং-এর পর আরো সুন্দরভাবে আপনার পোশাকটি উপস্থাপন করা সম্ভব হবে।

Image may contain: 3 people, people standing

অঙ্গভঙ্গি: ভিডিও পোশাক প্রদর্শণের জন্য একটি শক্তিশালী উপকরণ। স্থির চিত্রের চাইতে চলমান এ চিত্রে পোশাকের সব ধরনের উপস্থাপন সম্ভব। এর জন্য সকল প্রস্তুতি শেষে মডেল উপস্থাপনাও জরুরী। ফ্রেমের শুরুতে মডেলের হাঁট চলায় একটা ছন্দ থাকা উচিৎ যা পোশাকটিকে আরো সুন্দরভাবে তার শরীরে খেলা করাবে। হেলা দুলা, বা নাচের ভঙ্গি দিয়ে মডেলরে প্রবেশ ও প্রস্থান একটা শিল্প যা এই স্বল্প সময়ের মর্ধ্য প্রানবন্ত হয়ে ওঠে। এজন্য সংশ্লিষ্ট ভিডিও ইউটিউবে দেখা যেতে পারে। কঠিন মনে হলে একটু হেলে দুলে বা একটু ভাঁজ হয়ে কোমর দুলিয়ে স্বাভাবিক হাঁটার ভিডিও তোলা যেতে পারে প্রাথমিক অবস্থায়।

সেটে হাঁটার সময় ৯০ডিগ্রি কোণেমেুখ ঘুরিয়ে ক্যামেরায় তাকানো আর এংগেল হয়ে একপায়ের উপর ভর দিয়ে কয়েক সেকেন্ডের জন্য থামা-ও ভিডিওটিকে একটা আলাদা মাত্র দেয় যা পোশাকটিকে আকর্ষণীয় ভাবে উপস্থাপন করে। বিভিন্ন ভঙ্গিমার একটা তালিকা করে এক একটা শটে আলাদাভাবে ভিডিও করুন। এই অঙ্গ ভঙ্গির কাজটা করার আগে আয়নার সামনে অনেকবার প্রাকটিস করান মডেলকে। এই শটগুলো বারবার নিয়ে রাখুন।

আবার সেটের উপর ফ্রেমে হাঁটার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন হাত ও পায়ের অবস্থানের উপর। পা যেন সামনের দিকে থাকে আর হাত যেন খুব বেশি দোল না খায়। সেটে হাঁটার আগে একবার হেঁটে দেখতে হবে কয ধাপ হাঁটতে হবে মডেল কে। কোন জায়গায় এসে থামতে হভে বা কখন ঘুরে ক্যামেরায় তাকাতে হবে, এরপর একবার পেছন ফিরে আবার বেরিয়ে যেতে হবে এগুলো প্রাকটিস করেতে হবে।

এছাড়াও বিভিন্ন বসার ভঙ্গিতেও ভিডিও বানানো সম্ভব। সে বিষয়ে পরে অন্য সময় আলোচনা করা যাবে। সমস্ত ভিডিও শটগুলো নিয়ে এডিট করুন বা কোনো এডিটরকে দিয়ে করিয়ে নিন বা আমার কাছেও পাঠাতে পারেন। আমি এডিট করিয়ে ফাইনাল ভিডিও পাঠিয়ে দিব আপনাকে এর জন্য কোনো ফি প্রথমবারে দিতে হবে না। আবার হাতে কলমে শিখতে চাইলেও সময় করে কাজের মাধ্যমে আপনাকে দেখিয়ে দেয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে সবকিছু রেডি রাখবেন। সুযোগ মতো একটা তারিখ করে আমি আপনার নির্ধারিত জায়গায় গিয়ে দেখিয়ে দিয়ে আসবো। এর জন্য প্রথমবার কোনো ফি দিতে হবে না। আবার চাইলে আমাকেও সমস্ত দায়িত্ব দিলে পুরো ভিডিওটা আপনার বাজেট অনুযায়ী বানিয়েও দিতে পারবো। আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করুন। যারা এ বিষয়ে দক্ষ তারাও কমেন্ট করুন। আমরা শিখতে চাই। যেকোনো জিজ্ঞাসাফ্যিাশান ফিল্ম বানানো, বাজেট তৈরি, কনসেপ্ট সাজানো, স্ক্রিপ্ট তৈরি বা সার্বিক সহায়তার জন্য অবশ্যই কমেন্ট করবেন।

আগ্রহীরা কমপক্ষে তিনবার লেখাটি পড়বেন এবং কপি করে রাখবেন, এতে ভবিষ্যতে কাজ করার সময় আপনাদের সহায়তা হবে। সবাইকে ধন্যবাদ।